যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট ৬ হাজার ৮৭০ কোটি মার্কিন ডলারে সেই দেশের বহুজাতিক ভিডিও গেম নির্মাতা অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ডকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ডের দাম পড়ে প্রায় ৫ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা। বিবিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ খবর পরিবেশন করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, মাইক্রোসফট ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ডকে কিনে নিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কোম্পানিটির দাম দাঁড়ায় ৬ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে)। দুটো দামই বাংলাদেশের এক বছরের বাজেটের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার হলো ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ডকে কিনলে এটি হবে মাইক্রোসফটের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় অধিগ্রহণ চুক্তি। আগামী ২০২৩ সালে এ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। এর ফলে মাইক্রোসফট একাধারে শুটার ভিডিও গেম নির্মাতা কল অব ডিউটি, বিনোদন ভিডিও প্রস্তুতকারক ওয়ারক্রাফট ও মাল্টিপ্লেয়ার শুটার গেম নির্মাতা ওভারওয়াচের মতো গেমিং ফ্র্যাঞ্চাইজি তথা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক হয়ে যাবে। এ অধিগ্রহণ চুক্তিটি হবে গেমিংয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়। মাইক্রোসফট আরেক জনপ্রিয় গেমিং কোম্পানি বেথেসডা কেনার এক বছর পরে এসে অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ডকে অধিগ্রহণের ঘোষণা দিল। মাইক্রোসফটের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সত্য নাদেলা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা গেমিংয়ের জগতে একটি নতুন যুগের সূচনা করতে বিশ্বমানের গেম প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি। এর ফলে খেলোয়াড় ও নির্মাতারা নিরাপদ গেম দেখা ও তৈরির সুযোগ পাবেন।’ অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ডের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী তাদের অনেকগুলো গেম স্টুডিও রয়েছে। সব মিলিয়ে তাদের মোট জনবল হচ্ছে ১০ হাজার, যাদের সবার চাকরি এ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর নতুন কোম্পানিতে অর্থাৎ মাইক্রোসফটে ন্যস্ত হবে। অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ড হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের উপকূলীয় শহর সান্টা মনিকাভিত্তিক একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এটি মূলত ভিডিও গেম তৈরি করে থাকে। ২০০৮ সালের জুলাইয়ে এটির যাত্রা শুরু হয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অবশ্য যৌন হয়রানি, অসদাচরণসহ বিভিন্ন কারণে অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ডে কর্মপরিবেশ যেন বিষাক্ত হয়ে ওঠে। এ রকম পরিবেশে আর কাজ না করে কোম্পানিটি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ববি কোটিক। বিভিন্ন সময় মাইক্রোসফট আরও কয়েকটি কোম্পানি অধিগ্রহণ করে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালে ২ হাজার ৬২০ কোটি ডলারে লিংকডইন, ২০২১ সালে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে নুয়ান্স, ২০১১ সালে ৮৫০ কোটি ডলারে স্কাইপে, ২০২০ সালে ৮১০ কোটি ডলারে জেনিম্যাক্স মিডিয়া, ২০১৮ সালে ৭৫০ কোটি ডলারে গিটহাব, ২০০৭ সালে ৫৯০ কোটি ডলারে অ্যাকুয়ান্টিভ, ২০১৫ সালে ৫৩০ কোটি ডলারে ইনফরমেটিকা ও ২০১৪ সালে ২৫০ কোটি ডলারে মোজাং। অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ড কল অব ডিউটি ও ক্যান্ডি ক্র্যাশের মতো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠা কিছু গেম তৈরি করে। বর্তমানে তাদের তৈরি গেমগুলো বিশ্বের ১৯০টি দেশে খেলা হচ্ছে। এসব গেমের গড় মাসিক খেলোয়াড় সংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি। অন্যদিকে মাইক্রোসফটও হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অতিধনী বিল গেটস ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল পল অ্যালেনকে সঙ্গে নিয়ে এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এটির পণ্য ও সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার সফটওয়্যার, কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস, পিসি (পারসোনাল কম্পিউটার), ভিডিও গেম ইত্যাদি। বিল গেটস এখন ১৩ হাজার ৩৩০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী। এদিকে মাইক্রোসফট বাজার মূলধনে বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এটির বর্তমান বাজারমূল্য আড়াই লাখ কোটি ডলার। শীর্ষস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেরই আরেক বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল। সেটির বাজার মূলধন সম্প্রতি তিন লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।